আটলান্টিক মহাসাগর কি রহস্যময় Mysterious Ocean Atlantic
আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরে লুকিয়ে আছে যত রহস্য
আটলান্টিক মহাসাগর কি রহস্যময় Mysterious Ocean Atlantic
>> সাগরের নীলাভ রং দেখে সবাই মোহ গ্রস্ত হয়ে পড়েন। তবে জানলে অবাক হবেন, সাগরের নিজস্ব কোনো রং নেই। সূর্যের কারণেই সমুদ্রে একটি নীল আভা তৈরি হয়। সূর্যের লাল ও কমলা রং সাগরের অনেক গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে। ফলে আপনি যত নীচে যাবেন সমুদ্র আরও নীল দেখাবে। সাগরের পানিতে আলো শোষণ করার জন্য পর্যাপ্ত অণু থাকে বলেই তা রং ধারণ করতে পারে।
>> সমুদ্রের গভীরতম অংশটি সত্যিই, সত্যিই গভীর। এ বিষয়েও অনেকেরই ধারণা নেই। মারিয়ানা ট্রেঞ্চকে বিশ্বের মহাসাগরের গভীরতম অংশ পৃথিবীর গভীরতম বিন্দু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ট্রেঞ্চের অভ্যন্তরে"চ্যালেঞ্জার ডিপ" নামে পরিচিত একটি উপত্যকা আছে, যা পৃষ্ঠ থেকে নীচে প্রায় ৭ মাইল (৩৬ হাজার ফুট) বিস্তৃত।
জানলে অবাক হবেন, মাউন্ট এভারেস্টও নাকি ঢুকে যেতে পারে এই খাদে। ২০১৯ সালে ভিক্টর ভেসকোভো সমুদ্রের গভীরতম অংশে পৌঁছানো প্রথম ব্যক্তি হয়ে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন।তবে তিনি এই খাদের ৩৫ হাজার ফুট পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন । আজও কেউ এই খাদের সর্বশেষ অংশে পৌঁছতে পারেন নি।
>> মহাসাগরের তলদেশে একাধিক হ্রদ ও নদী রয়েছে। সমুদ্রের কিছু পৃষ্ঠে এমন কিছু দর্শনীয় স্থান আছে যা দেখলে সবার চোখ কপালে উঠে যাবে। এসব নদী-হ্রদের কয়েকটি মাইলের পর মাইল দীর্ঘ। সমুদ্রের তলদেশ থেকে পানি উঠে যায় ও লবণের স্তরগুলোতে দ্রবীভূত করার মাধ্যমেই এসব নদীঁ ও হৃদের সৃষ্টি হয়।
>> সমুদ্রেও নাকি সোনা আছে। তাও আবার মিলিয়ন টন। তবে তা অস্পৃশ্য। তাই চাইলেও সাগরের তলদেশ থেকে সোনা উদ্ধার করা সম্ভব নয়।
>> পৃথিবীর বৃহত্তম জলপ্রপাত আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। আটলান্টিক মহাসাগরের ডেনমার্ক প্রণালীতে সাগরের তলদেশে একটি জলপ্রপাত বিদ্যমান। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ২০০০ জলপ্রপাতের সমান। পূর্ব দিকের প্রণালীর ঠান্ডা পানি পশ্চিম দিক থেকে আসা উষ্ণ তরলের চেয়ে বেশি ঘন। যখন দুটি প্রণালীর পানি মিশে যায়, তখন ঠান্ডা সরবরাহ ডুবে যায় ও একটি জলপ্রপাত তৈরি করে।
>> আমরা সমুদ্রের বেশিরভাগ সামুদ্রিক জীবনযাত্রা সম্পর্কে খুব কমই জানি। সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে লুকিয়ে থাকা সম্ভাব্য সামুদ্রিক জীবনের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ শানাক্ত করেছি মাত্র আমরা। এর বেশির ভাগই ছোট জীব, তবে সম্ভবত কিছু তিমি ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রজাতি এখনও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। প্রতিবছর গড়ে ২০০০ স্তন্যপায়ীর নতুন প্রজাতি শনাক্ত করা হয় মহাসাগর থেকে।
>> পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানের অবস্থান হলো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে। যা পয়েন্ট নিমো নামে পরিচিত। ৩টি প্রতিবেশী দ্বীপের উপকূল থেকে প্রায় ১০০০ সমদূরত্ব মাইল দূরে এর অবস্থান। এটি প্রায় মহাকাশের সমমান দুরত্বের স্থান।
>> অনেকেই হয়তো জানেন না যে, বেশিরভাগ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত সমুদ্রের পৃষ্ঠের নীচে ঘটে। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভূমি-নিবাসীদের নজরে পড়ে না। কারণ পানির নিচে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, মহাসাগরের তলদেশে ১ মিলিয়নেরও বেশি আগ্নেয়গিরি আছে। যারা কিছু বিলুপ্ত ও কিছু খুব সক্রিয় আছে। সক্রিয় আগ্নেয়গিরি সমুদ্রের পৃষ্ঠের নীচে অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়ে উত্তপ্ত লাভা ছড়ায়।
>> সমুদ্রের গভীরে বিলিয়ন ডলার মূল্যের ধন থাকতে পারে। সমুদ্রে কত হাজার হাজার জাহাজ ধ্বংস হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। এসব জাহাজে থাকা ধনসম্পদ নিশ্চয়ই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সাগরের তলদেশে। ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর (এনওএএ) ধারণা, এক মিলিয়ন ডুবে যাওয়া জাহাজ অন্ধকারে লুকিয়ে আছে; অন্যরা উদ্ধার না হওয়া গুপ্তধনের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।
>> সাগরের মাছ প্রচুর প্লাস্টিক খাচ্ছে। প্রতিবছর সমুদ্রে ৭ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক ফেলা হচ্ছে। সান দিয়েগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের ধারণা, প্রতি বছর সাগরের মাছেরা ১২-২৪ হাজার টন প্লাস্টিক গ্রাস করে।
>> সমুদ্রের সবচেয়ে বড় ঢেউগুলো তলদেশে হয়। তরঙ্গগুলো বিভিন্ন ঘনত্বের জলের স্তরগুলোর অংশ ও ভেঙে পড়ার আগে ৮০০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।
সূত্র: মেন্টালফ্লস
জেএমএস/জেআইএম