চোখ ওঠা বা Conjunctivitis বাংলাদেশের মানুষের চোখে চোখে
আমাদের ঘরে ঘরে এখন শুরু হয়েছে চোখ ওঠা বা কন্জাঙ্কটিভাইটিস (Conjunctivitis) আমরা আজ কেউ না কেউ না কেউ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছি । চোখ ওঠা হচ্ছে চোখের ভাইরাসজনিত ইনফেকশনজনিত একটি সমস্যা।
গ্রামে সাধারনত চোখ ওঠা বলতে চোখ লাল হয়ে যাওয়া বুঝে থাকে। কিন্তু এটি একটি উপসর্গ মাত্র। চোখ লাল হওয়ার অনেক কারণ আছে যেমন-জীবাণুর মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়া, এডিনো ভাইরাসঘটিত কারণে, হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসঘটিত কারণে, স্কেলেরার ইনফেকশনঘটিত কারণে, ইউভিয়াল টিস্যু ইনফেকশনঘটিত কারণ ইত্যাদি ইত্যাদি।
জেনে রাখা ভাল ভাইরাস কেরাটাইটিস বা হারপেম সিমপেক্স ভাইরাসঘটিত ইনফেকশনই ম্যাইনলি এই ইনফেকশনের প্রধান কারণ। এ ইনফেকশন মূলত এক চোখে আক্রান্ত হয়ে থাকে। কয়েকদিন পর দুচোখেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চোখে চুলকানির লক্ষণও অনুভূত হয়।
যেভাবে ছড়ায়
চোখে ভাইরাস জনিত প্রদাহ হলে চোখের পানিতে ভাইরাস ভেসে বেড়ায়। যখন এই অশ্রু মুছতে যাই, তখনই এটি আমাদের হাতে এসে যায়। এরপর থেকেই সেই হাত দিয়েই আমরা যা কিছুই ছুঁই না কেন, সেখানে ভাইরাস চলে আসে। যেমন কারোর সঙ্গে করমর্দন, টিভি, এয়ারকন্ডিশনার রিমোট, ব্যবহৃত তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, এমনকি মুঠোফোন ইত্যাদিতে চলে আসতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই সময়ে বাসায় থাকতে হবে। তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা ভাবে রেখে ব্যবহার করা।
সতর্কতা
ধুলাবালি, আগুন,আলো,রোদ চোখে যেন না লাগে , ময়লা-আবর্জনা যুক্ত স্যাতসেঁতে জায়গায় না যাওয়া, পুকুর,খাল,বিল,নদী-নালায় গোসল না করা, চোখে কালো সান গ্লাস চশমা ব্যবহার করা, টেলিভিশনে ছবি ,মোবাইলে ভিডিও না দেখা। রোগ না সারা পর্যন্ত বিশ্রাম নেয়া এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে পরীক্ষা করে নিয়ে ঔষধ খাওয়া। সংক্রমন রোধে চোখ ওঠা রোগীদের থেকে দূরে থাকা
চোখ ওঠার ক্ষেত্রে সাধারনত ভাইরাসের আক্রমণের পর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও ঘটে। এ জন্য দিনে তিন থেকে চারবার চোখে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ক্লোরামফেনিকল প্রথম ৭২ ঘন্টায় ১থেকে ২ ফোটা করে দৈনিক ৪ থেকে ৬ বার ব্যবহার করতে হবে।পরবর্তীতে প্রতি চার ঘণ্টা পর পর ৭ দিন ব্যবহার করতে হবে । চোখে চুলকানি থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন জতীয় ঔষধ ১ টি করে রাতে সেবন করতে হবে। তবে অবশ্যই চক্ষু চিকিৎসকের প্রেসক্রাইবড বা পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করা উচিত।
আক্রান্ত রোগীর ভাইরাস সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে নিম্নরূপ বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন–
১। চোখের পানি বা ময়লা মোছার জন্য পরিষ্কার রুমাল, তোয়ালে বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে।
২। বাইরের ধুলাবা্লি বা আঘাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কালো নন পাওয়ার্ড চশমা পরতে হবে।
৩। নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে চোখে ঝাপটা দেয়া।
৪।চোখের পাতা বেশি ফুলে গেলে বরফ দিতে হবে।
৫।চিকিৎসকের পরীক্ষা ওপরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
৬।চোখে ব্যাথা, জ্বালা করলে চিকিৎসকের শরণা পন্ন হতে হবে।
৭। হাত না ধুয়ে যখন ইচ্ছামত চোখ ঘষা বা চুলকানো নিষেধ।
৮।চোখ ওঠা শিশুদের আলাদা বিছানায় শোয়াতে হবে।