বুর্জ খলিফা নির্মাণ এর অজানা তথ্য
১৬৩ তলা বুর্জ খলিফা তৈরি করতে অনেক শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন আর আহতও হয়েছেন অনেক।প্রকৌশলীদের সামান্য ভুলের জন্য অনেক মহা সংকটের সম্মুখীন হতে হয়।দুবাই শহরের শরীর ও রক্ত ফোটানো তাপের মাঝে ফাঁকা জায়গায় বসে এই বুর্জ খলিফা নির্মাণ দুসাধ্য কঠিন কাজ ছিল।বিশাল উচ্চতার কারণে এর ভিতরের তাপমাত্রা প্রায় ১০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড সৃষ্টি হয়েছিল ।এই তাপমাত্রার মাঝে কাজ করার জন্য ২৪,০০০ গ্লাস প্যানেলস সংযুক্ত করা হয়েছিল আর এগুলো সেটিং করা খুবই কঠিন কাজ ছিল।
ADVERTISEMENT
বুর্জ খলিফার সর্বোচ্চ উপরে যে স্টেয়ার পাইপটি দেখা যায় এর ওজন ছিল প্রায় ৩,০০০০০ কেজির সমান।বেশ কতগুলো হেলিকপ্টার দিয়েও এটি তুলতে সক্ষম ছিল না।এর নির্মাণের সব তথ্য আমার এই লেখাটিতে আপনাদের জানাব।
এই বিল্ডিং তৈরিতে ১৫০ কোটি ডলার বা ১১৪ আরব রুপি যা বাংলাদেশি টাকায় ১০,০০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।আপনি জানেন কি এটি নির্মাণে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল তাহলে জানুন।
- বুর্জ খলিফার শিখরটি ১০০ কিলোমিটার দূর থেকে দেখা যায়।
- এতে সবচেয়ে দ্রুতগামি লিফট ব্যবহার করা হয়েছে।
- আবহাওয়া খারাপ হলে উপরের খিরকিগুলো অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায় কারণ নিয়মিত ভাবে এগুলো এভাবেই তৈরি করা হয়।
- এটি তৈরিতে ১২,০০০ শ্রমিক লেগেছিল।
- এর উচ্চতা ৩টি আইফেল টাওয়ারের উচ্চতার সমান।
- ২৪,০০০ গ্লাস প্যানেলসের ওজন ছিল ৩৫টি A 380 AIRCRAFT এরোপ্লেন বা ৫টি এয়ারবাস বিমানের সমান।
১ম সমস্যা বুর্জ খলিফা তৈরির জন্য সময় বেধে দেয়া হয়েছিল ৬ বছর আর ডিজাইন তৈরিতেই ৩ বছর সময় লাগাতে এর লঞ্চ করার সময় পার হয়ে যায়।
২য় সমস্যার মধ্যে পড়ে এই বিল্ডিং এর জায়গার মাটি ছিল খুবই নরম এবং ভুমিতে কোন পাথর ছিল না।আর থাকলেও তা ছিল খুবই নরম ।এত বিশাল আকারের ১৬৩ তলা বিল্ডিং খাড়া করা হবে কিভাবে? এর জন্য মাটির ৫০ মিটার গভীর পর্যন্ত ১৫২ টি স্টীল রড পোতা হয় আর এর উপরে একের পর এক ১৯২ টি স্টীল পিলারের উপর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।
৩য় সমস্যা ছিল কয়েক য়তলা বিল্ডিং তৈরি করতেই মাটি থেকে উপরে সিমেন্ট,বালি ও ইটের টুকরার মিক্সার জমে যেতে থাকে।এই সমস্যা সমাধানের জন্য কংক্রিট সাকশন সিস্টেম তৈরি করা হয় যাতে পাইপগুলিকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ৩ টি পাম্পিং মেশিন এর সাহায্যে তা করা হয়।
৪র্থ সমস্যা ৩য় বছরে যখন ১৪০ তলা নির্মাণ করা হয় তখন এই অট্রালিকা নির্মাণে ক্রেন মেশিন ব্যবহার করা হত। আর সেগুলো ১৪০ পর্যন্ত মাল তুলতে সক্ষম ছিল।বাকি তলার কাজ কিভাবে হবে আর এদিকে ক্রেন ড্রাইভাররা এত উঁচুতে জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ না করার সম্মতি দেয় ।ফলে দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অভিজ্ঞ ক্রেন ড্রাইভার এনে কাজ করা হত।ADVERTISEMENT
৫ম সমস্যা হল যখন বিল্ডিং এর কাজ শেষ তখন গ্লাস প্যানেলস বিরাট সমস্যা হয়।সমস্ত গ্লাস প্যানেলস লাগানো শেষ হলে এর ভিতরের তাপমাত্রা অনেক উচ্চতা ও দুবাই এর উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে ১০০ডিগ্রী সেন্টিগেড সৃষ্টি হয়েছিল।আর এর ভিতরের তাপমাত্রা কমানোর সমাধান বের করতেই ১৮ মাস সময় লেগে যায়।বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার JOHN ZERAF যিনি কিনা এমন এক গ্লাস তৈরি করেছিলেন যা বিল্ডিং গ্লাসে রিফ্লেক্ট হয়ে আবার বাইরে ফিরে আসবে।সমস্যা হল একটি গ্লাসের দাম ছিল ২০০০ ডলার ।পুরো বিল্ডিং এ দরকার ছিল ২৪,০০০ গ্লাস প্যানেলস।আর এতে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়েছিল। যেগুলোর মূল্য ছিল ৩ আরব বা বাংলায় ৬০ কোটি টাকা। আবার এ গ্লাসগুলো তৈরি করতে একটি গ্লাস ফ্যাক্টরি বসাতে হয়েছিল।
সমস্যা ৬ বুর্জ খলিফার উচ্চ শিখরে যা ৮২৮ মিটার উঁচু লম্বা স্টীল বসানো নিয়ে।যার দৈর্ঘ্য ছিল ১৩৬ মিটার ওজন ছিল ৩৫০ টন।এত ওজনের পাইপ অনেকগুলো হেলিকপ্টার এর মাধ্যমেও তোলা সম্ভম হয়নি.১৩৬ মিটার লম্বা পাইপ তৈরি করতে বিল্ডিং এর ভিতরেই ছোট ছোট টুকরো করে উপরে নিয়ে যাওয়া হয়।
সমস্যা ৭ বিল্ডিং সব কিছু ঠিকঠাক মত তৈরি তো হল কিন্তু ২৪,০০০ গ্লাস প্যানেলস এর গায়ে ধুলো বালি জমাতে কর্মচারি দের দড়ির সাহায্যে ঝুলিয়ে পালিশের কাজ করা হয়।